SEBA ALL DISTRICT PRE-BOARD MCQ HSLC 2024

Get free pdf Notes
Sst Mcq

NOTES



অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর


● অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও

প্রশ্ন ১। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে অসমের রাজস্ব সংগ্রহ পদ্ধতির কী পরিবর্তন হয়েছিল ?

Ans: মুদ্রার ব্যবহারে অসমের রাজস্ব সংগ্রহ পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছিল । ইংরেজের প্রবর্তিত টাকার মাধ্যমে মাটির খাজনা এবং অন্যান্য কর সংগ্রহ ব্যবস্থাই অসমীয়া প্রজার শোচনীয় অবস্থা করে তুলেছিল ।

প্রশ্ন ২। কোন সালে মোফট মিলস অসমে এসেছিলেন ?

Ans: ১৮৫৩ সালে ।

প্রশ্ন ৩। কেঞা কারা ছিল ?



Ans : উত্তরঃ কেঞাগণ ছিল সুদখোর মহাজন । অসমীয়া জনসাধারণ এই সুদখোর মহাজন থেকে অধিক সুদে টাকা ধার করে হলেও ভূমি রাজস্ব সরকারকে দিতে বাধ্য হয়েছিল । এই মহাজন শ্রেণি ছিল বহিরাগত ব্যবসায়ী , মারোয়ারি ( কেঞা ) এবং বাঙালি মহাজন ।

প্রশ্ন ৪। অসমে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে কে নেতৃত্ব দিয়েছিল ?


Ans: মণিরাম দেওয়ান ।

page No - 6

প্রশ্ন ৫। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে অসমের বিদ্রোহীরা কোন আহোম রাজকোঅরকে পুনরায় সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল ?


Ans: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে অসমের বিদ্রোহীগণ কন্দপেশ্বর সিংহকে পুনরায় সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল ।

প্রশ্ন ৬। মণিরাম দেওয়ানকে কোন বাঙালি মোক্তার সাহায্য করেছিল ?


Ans: মণিরাম দেওয়ানকে মধু মল্লিক নামক একজন বাঙালি মোক্তার সাহায্য করেছিল ।

প্রশ্ন ৭। মণিরাম দেওয়ানের সঙ্গে আর কাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল ?


Ans: মণিরাম দেওয়ানের সঙ্গে পিয়লি বরুয়াকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল ।



প্রশ্ন ৮। মণিরাম দেওয়ানের বিচার করেছিল কে ?

Ans :- ক্যাপ্টেইন হলরয়ড সাহেব মণিরাম দেওয়ানের বিচার করেছিল ।

প্রশ্ন ৯। অসমের ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের বিফলতার দুটো কারণ উল্লেখ করো ।

Ans: উত্তরঃ অসমের ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের বিফলতার দুটো কারণ হল ―

(i) মণিরাম দেওয়ানের সমর্থকগণ শুধু যোরহাট ও শিবসাগরে সীমাবদ্ধ ছিল । নগাঁও , কামরূপ ও গুয়াহাটিতে বিশেষ সমর্থন লাভ করেনি ।
(ii ) বিদ্রোহের নেতাদের সময় জ্ঞান ছিল না , কেন না তাঁরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সময়মত কার্য সম্পন্ন করেনি । যার ফলে ইংরাজ সরকার প্রতিরক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল ।




প্রশ্ন ১০। কোন কোন সালে টিকিট কর আর আয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল ?


Ans :- ১৮৫৮ সালে টিকিট কর ও ১৮৬০ সালে আয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল ।




প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশের শাসনকালে অসমের কৃষকের দুরবস্থার দুটো কারণ লেখো ।


Ans :- উত্তরঃ ব্রিটিশের শাসনকালে অসমের কৃষকের দুরবস্থার দুটো কারণ হল ―
( ১ ) কৃষির উপরে ব্রিটিশগণ বিভিন্ন ধরনের কর প্রবর্তন করেছিল । ফলে কৃষক বিদ্রোহ কৃষকগণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।
( ২ ) ব্রিটিশ সরকারে চরাঞ্চল বা চরভূমিতে গ্রেজিং কর , আবকারী কর ইত্যাদি প্রবর্তন কর ছাড়াও নদীতে সোনা সন্ধান, মাছ ধরা ইত্যাদির জন্য নদীর ‘ ডাক ’ এ ( ইজারা ) দেওয়ার ফলে কৃষকদের অবস্থা অতি শোচনীয় হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার কৃষি তথা কৃষকদের উন্নতিকল্পে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ।
প্রশ্ন ১২। লেফটেনান্ট সিঙ্গার কে ছিলেন ?


| Ans :- লেফটেনান্ট সিঙ্গার ছিলেন নগাঁওয়ের সহকারী উপায়ুক্ত ।

প্রশ্ন ১৩। ফুলগুরির ধাওয়া কখন সংঘটিত হয়েছিল ?


Ans :- ১৮৬১ সালে ।

প্রশ্ন ১৪। রঙিয়ার কৃষক বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়েছিল ?


Ans:- রঙিয়ার কৃষক বিদ্রোহ ১৮৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংঘটিত হয়েছিল ।

প্রশ্ন ১৫। লচিমা কোথায় অবস্থিত ?


Ans :- বরপেটা জেলার সরুক্ষেত্রী মৌজায় লচিমা অবস্থিত ।
প্রশ্ন ১৭। পথরুঘাটের কৃষক বিদ্রোহ কখন হয়েছিল ?

Ans: ১৮৯৪ সালের জানুয়ারী মাসে পথরুঘাটের কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ।

প্রশ্ন ১৮। ১৮৬১ সালে জয়ন্তীয়া বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিল ?

Ans: উত্তরঃ ওকিয়াং নংকহ ।

প্রশ্ন ১৯। ১৮৮১ সালে উত্তর কাছাড়ের জনজাতীয় বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিল ?



Ans : ১৮৮১ সালে উত্তর কাছাড়ের জনজাতীয় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সম্বোধন কছারি ।

প্রশ্ন ২০। টিকেন্দ্রজিতকে কে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল ?


Ans: বি . ডব্লিউ . মর্টনে টিকেন্দ্রজিতকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল ।

প্রশ্ন ২১। জে . ডব্লিউ . কুইন্টনকে কোন সালে হত্যা করা হয়েছিল ?


Ans: ১৮৯০ সালে ।

page No - 6

প্রশ্ন ৫। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে অসমের বিদ্রোহীরা কোন আহোম রাজকোঅরকে পুনরায় সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল ?


Ans: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে অসমের বিদ্রোহীগণ কন্দপেশ্বর সিংহকে পুনরায় সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল ।

প্রশ্ন ৬। মণিরাম দেওয়ানকে কোন বাঙালি মোক্তার সাহায্য করেছিল ?


Ans: মণিরাম দেওয়ানকে মধু মল্লিক নামক একজন বাঙালি মোক্তার সাহায্য করেছিল ।

প্রশ্ন ৭। মণিরাম দেওয়ানের সঙ্গে আর কাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল ?


Ans: মণিরাম দেওয়ানের সঙ্গে পিয়লি বরুয়াকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল ।



প্রশ্ন ৮। মণিরাম দেওয়ানের বিচার করেছিল কে ?

Ans :- ক্যাপ্টেইন হলরয়ড সাহেব মণিরাম দেওয়ানের বিচার করেছিল ।

প্রশ্ন ৯। অসমের ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের বিফলতার দুটো কারণ উল্লেখ করো ।

Ans: উত্তরঃ অসমের ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের বিফলতার দুটো কারণ হল ―

(i) মণিরাম দেওয়ানের সমর্থকগণ শুধু যোরহাট ও শিবসাগরে সীমাবদ্ধ ছিল । নগাঁও , কামরূপ ও গুয়াহাটিতে বিশেষ সমর্থন লাভ করেনি ।
(ii ) বিদ্রোহের নেতাদের সময় জ্ঞান ছিল না , কেন না তাঁরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সময়মত কার্য সম্পন্ন করেনি । যার ফলে ইংরাজ সরকার প্রতিরক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল ।




প্রশ্ন ১০। কোন কোন সালে টিকিট কর আর আয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল ?


Ans :- ১৮৫৮ সালে টিকিট কর ও ১৮৬০ সালে আয়কর প্রবর্তন করা হয়েছিল ।




প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশের শাসনকালে অসমের কৃষকের দুরবস্থার দুটো কারণ লেখো ।


Ans :- উত্তরঃ ব্রিটিশের শাসনকালে অসমের কৃষকের দুরবস্থার দুটো কারণ হল ―
( ১ ) কৃষির উপরে ব্রিটিশগণ বিভিন্ন ধরনের কর প্রবর্তন করেছিল । ফলে কৃষক বিদ্রোহ কৃষকগণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।
( ২ ) ব্রিটিশ সরকারে চরাঞ্চল বা চরভূমিতে গ্রেজিং কর , আবকারী কর ইত্যাদি প্রবর্তন কর ছাড়াও নদীতে সোনা সন্ধান, মাছ ধরা ইত্যাদির জন্য নদীর ‘ ডাক ’ এ ( ইজারা ) দেওয়ার ফলে কৃষকদের অবস্থা অতি শোচনীয় হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার কৃষি তথা কৃষকদের উন্নতিকল্পে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ।
প্রশ্ন ১২। লেফটেনান্ট সিঙ্গার কে ছিলেন ?


| Ans :- লেফটেনান্ট সিঙ্গার ছিলেন নগাঁওয়ের সহকারী উপায়ুক্ত ।

প্রশ্ন ১৩। ফুলগুরির ধাওয়া কখন সংঘটিত হয়েছিল ?


Ans :- ১৮৬১ সালে ।

প্রশ্ন ১৪। রঙিয়ার কৃষক বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়েছিল ?


Ans:- রঙিয়ার কৃষক বিদ্রোহ ১৮৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংঘটিত হয়েছিল ।

প্রশ্ন ১৫। লচিমা কোথায় অবস্থিত ?


Ans :- বরপেটা জেলার সরুক্ষেত্রী মৌজায় লচিমা অবস্থিত ।
Textual Question


1) ১৮৫৭-৫৮ সালের বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

Ans: ১৮৫৭-৫৮ সালের বিদ্রোহের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ঃ

১. রাজনৈতিক কারণ: আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ১৮৫৭ সাল উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি যেমন—লর্ড ওয়েলেসলির বশ্যতামূলক মিত্রতা নীতি এবং লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি ভারতীয় শাসকদের বঞ্চিত করেছিল। ১৮৫৭ সালের ১০ মে তারিখে মিরাটে ভারতীয় সৈন্যদের বিদ্রোহের সমর্থনে অসমের সৈন্যবাহিনীও বিদ্রোহ করেছিল, যা ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিল।

২. ভূমি রাজস্ব ও মুদ্রা অর্থনীতি: ব্রিটিশ সরকারের ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির নীতি এবং মুদ্রা অর্থনীতি অসমীয়া জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। এই মুদ্রা অর্থনীতি সুদখোর মহাজন শ্রেণির উত্থান ঘটিয়েছিল এবং অসমীয়া প্রজা তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ভূমি রাজস্ব দিতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে অসমীয়াদের অর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল।

৩. অভিজাত শ্রেণির বিদ্রোহ: আহোম সামন্তরীয় শ্রেণির অনেকে নতুন প্রশাসনে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে বিদ্রোহ করেছিল। ইংরেজরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিদের প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ করায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছিল।

৪. দাসপ্রথার নিষিদ্ধকরণ: ১৮৪৩ সালে ইংরেজরা অসমে দাসপ্রথা বিলোপ করে, যার ফলে ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও অন্যান্য অভিজাত শ্রেণির লোকেরা সাধারণ মানুষে পরিণত হয় এবং তারা ইংরেজ শাসনের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

৫. সামাজিক সংস্কার: সতীদাহ প্রথার বিলোপ এবং বিধবা বিবাহের প্রবর্তন অসম ও ভারতের মানুষের মনে ভয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ সরকারকে ধর্ম ও সংস্কৃতির ধ্বংসকারী হিসেবে মনে করে জনগণ অসন্তোষ প্রকাশ করে।এই কারণগুলির জন্য অসমের জনগণ ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে এবং ১৮৫৭-৫৮ সালের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন ৫। ফুলগুরি ধাওয়ার ওপর একটি টীকা লেখো ।

Ans: ব্রিটিশের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে শোষিত কৃষক জনতা যে বিদ্রোহ করেছিল , অসমে প্রথম বিদ্রোহ হচ্ছে সেই ফুলগুরির ধাওয়া । নগাঁও থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত ফুলগুরি তিওয়া ( জনজাতি ) জনবসতিপূর্ণ একটি গ্রাম , যেখানে জনসাধারণ বৃহৎ পরিমাণে‘ আফু খেতি ‘ ( আফিম চাষ ) করত এবং তার দ্বারাই তারা জীবিকা নির্বাহ করত । ব্রিটিশ সরকার নিজের সুবিধামতো করে কানি ( আফিম , মাদক ) বিক্রী করতে গেলে ( আফু গুটি থেকে কানি , মাদক দ্রব্য প্রস্তুত করা হয় ) আফু চাষ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেছিল সেই ফুলগুরি অঞ্চলের কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়েছিল । ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার আফু চাষ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় । তাতে সমগ্র তিওয়া জনজাতির লোকেরা অতিশয় অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে , কারণ সরকারী কানির প্রচলন কিন্তু বন্ধ করা হয়নি । ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত এই সমস্ত লোকদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল । তদুপরি পান – সুপারির উপরও সরকার কর আরোপ করবে বলে 83 খবরে প্রকাশ পেয়েছিল ।

সরকার আফু চাষ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ১৮৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রায় ১৫০০ কৃষক তার প্রতিবাদ করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে ফুলগুরিতে রাইজমেল অনুষ্ঠিত করে । সেই সভায় কৃষকরা আফু চাষ বন্ধের যে নির্দেশ দিয়েছিল তা বাতিল করার জন্য এবং পান – সুপারির ওপর যাতে কোনো কর আরোপ না করা হয় সেই কথা উপায়ুক্তকে জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । সেই সময় নগাঁওয়ের উপায়ুক্ত ছিলেন লেফটেনান্ট হাবটি স্কন্স।তিনি জনতার আবেদনের প্রতি সমর্থন জানানো তো দূরের কথা , কৃষকদের প্রতি দুর্ব্যবহার করলেন । ক্ষুব্ধ জনতা এই অপমানের প্রতিবাদ করার জন্য ১৫ অক্টোবর থেকে পাঁচদিন ধরে ফুলগুরিতে রাইজমেল অনুষ্ঠিত করে ।

প্রথম দিন সমবেত প্রায় এক হাজার কৃষকের প্রায় অর্ধাংশই লাঠিসোঁটা নিয়ে সজ্জিত ছিল । এর পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিবাদীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করে । ১৮ অক্টোবর তারিখে সভায় প্রায় চার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল । উপায়ুক্ত হার্বার্ট স্কন্স সহকারি উপায়ুক্ত লেফটেনান্ট সিঙ্গারকে সভাস্থলীতে পাঠিয়েছেন । সিঙ্গার সভার উদ্দেশ্য জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে জনতার মাঝখান থেকে জাতি কলিতা নামে একটি লোক সাহেবকে জানাল যে কর্তৃপক্ষ কৃষক জনতার দাবিগুলোর প্রতি ( আফু চাষ বন্ধ প্রত্যাহার , পান – সুপুরির ওপর থেকে কর প্রত্যাহার ইত্যাদি ) সাড়া না দেওয়ায় তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে ।

এই কথায় সিঙ্গার যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে জনতাকে সেই স্থান ত্যাগ করে যাবার নির্দেশ দেন । অধিকন্তু তাঁর সঙ্গে নিয়ে আসা বাহিনীকে জনতার হাত থেকে লাঠিগুলো কেড়ে নেবার নির্দেশ দেন । লাঠির জন্য টানাটানি করলে জনতার মধ্য থেকে কাঁহিঘর মৌজার বাবু কৈবর্ত নামে একজন মাছুয়া সিঙ্গারের মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় । অন্য কৃষকরাও সিঙ্গ রিকে আক্রমণ করলে সেখানে তার মৃত্যু হয় । সিঙ্গারের মৃতদেহ নদীতে ছুঁড়ে ফেলা হয় । সিঙ্গারের সঙ্গে যে পুলিশ বাহিনী গিয়েছিল তারা ভয়ে পালিয়ে যায় । এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ফুলগুরি ধাওয়া নামে খ্যাত ।

প্রশ্ন ৬। ১৮৯৪ সালে উত্তর কামরূপে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো ।



Ans : উত্তরঃ ১৮৯৪ সালে উত্তর কামরূপের রঙ্গিয়া , লচিমা এবং দরং জেলার পথরুঘাট নামক তিনটি স্থানে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ।
রঙ্গিয়া বিদ্রোহ :- ফুলগুড়ি বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকারের শোষণ নীতির উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । এই বিদ্রোহ ইংরেজদের নূতন কর আরোপ করা বা রাজস্বের হার বাড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারেনি । ব্রিটিশ সরকার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দূর করার পরিবর্তে পুলিশ বাহিনীর শক্তি বাড়িয়ে তাদের ভীত করতে চেয়েছিল । অসমের স্থানে স্থানে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল ।
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে অসমের চিফ কমিশনার স্যার উইলিয়াম ওয়ার্ড রাজস্ব কর থেকে আশি শতাংশ এমনকি কোনো কোনো স্থানে একশ শতাংশ বাড়ান । ফলে কামরূপ জেলার রঙ্গিয়ার জনগণ ‘ রাইজমেলের ’ আয়োজনের মাধ্যমে করবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে সেম্বর একদল উত্তেজিত জনতা রঙ্গিয়া বাজারে লুটতরাজ চালায় ।
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জানুয়ারি কয়েক হাজার মানুষ রঙ্গিয়া থানার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বর্ধিত খাজনা না দেওয়ার শ্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলেন । ওই একই দিন কামরূপের জেলাশাসক ম্যাক ক্যাব সমস্ত রকম মেলের ( সমাবেশের ) উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন । সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। ফলে অনেক মানুষ হতাহত হয় । ম্যাক ক্যাবের এই কার্য ছিল ঘৃণ্য এবং বর্বরতার চূড়ান্ত নিদর্শন । এইভাবে রঙ্গিয়া বিদ্রোহ দমন করা হয় ।

লচিমা বিদ্রোহ :- রঙ্গিয়া বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার গোর্খা রাইফেলসের সৈন্যসহ যথেষ্ট সংখ্যক সামরিক এবং পুলিশ বাহিনী নিম্ন অসমে মোতায়েন করেছিল । এতে ইংরেজরা কিছু সংখ্যক লোকের কাছ থেকে কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল ।
এদিকে ‘ রাইজমেল ’ আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে কর না দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছিল । ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে জানুয়ারি কামরূপ জেলার লাচিমার নিকটবর্তী কল্পা নামক স্থানে এক মারমুখী জনতা দুজন রাজস্ব আদায়কারীকে প্রচণ্ড মারধর করে । ফলে এদের মধ্যে একজনের পরে মৃত্যু ঘটে । ব্রিটিশ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীদের ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাশিবিরে নিয়ে আসে । কিন্তু প্রায় আট হাজার লোক এইসব বন্দীদের মুক্তির দাবিতে সেনাশিবির ঘেরাও করে । বরপেটার মহকুমা শাসক মাধবচন্দ্র বরদলৈ এই ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও উত্তেজিত জনতার ভয়ে মধ্যরাতে তিনি শিবির পরিত্যাগ করে জেলাশাসক ম্যাক ক্যাবের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন । ২৫ শে জানুয়ারি জেলাশাসক ম্যাক ক্যাব ৫৯ জন রাইজমেলের দলপতিকে গ্রেপ্তার করে এদেরকে তাদের জন্য একটি কারাগার নির্মাণের কাজে লাগান । বিচার অপেক্ষাধীন বন্দীর ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবহার আইন বহির্ভূত ছিল সেইদিন বিকালবেলা ছয় হাজার মানুষের উত্তেজিত জনতা বন্দীদের মুক্তির দাবিতে একত্রিত হন ।
জেলাশাসক গুলির আদেশ দিলে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে । ইংরেজরা রাইজমেলের দলপতিদের বলদের মতো মাঠে হালচাষ করতে বাধ্য করে । এভাবে রাইজমেলের নেতাদের চূড়ান্ত অপমান করতে গিয়ে ইংরেজরা নিজেদের কু – কীর্তির পরিচয় তুলে ধরেছিল ।

পথরুঘাটের কৃষক বিদ্রোহ :- পথরুঘাটের জনতা ১৮৯৪ সালের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি রাইজমেলের যোগে খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছিল । বর্ধিত হারে ভূমির খাজনা নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলদৈ মহকুমার কলাইগাঁও , মঙ্গ লদৈ , সিপাঝার এবং পথারুঘাটের কৃষকগণ সভায় মিলিত হয়েছিল ।
জানুয়ারী মাসের ২৬ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন জোড়া এক বৃহৎ গণসভা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু মহকুমাধিপতি , জিলাধিপতি জে . ডি . অ্যাণ্ডারসনকে সমাবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল।পুলিশ মিলিটারির সাহায্যে খাজনা না দেওয়া কৃষকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া কার্য কৃষকদের মধ্যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছিল । গণসভা পেতে কৃষকগণ একত্রিত হয়েছিল । উপায়ুক্ত অ্যাণ্ডারসন পুলিশ অধ্যক্ষকে শক্তি প্রয়োগ করে কৃষকদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশ অধিক্ষক কৃষকদের শক্তি প্রয়োগ করে তাড়াবার চেষ্টা করলে কৃষকেরা উত্তেজিত হয়ে লাঠি উচিয়ে তেড়ে এল । সে অবস্থায় উপাযুক্ত অ্যাণ্ডারসন পুলিশ অধিক্ষককে গুলি চালনা করবার নির্দেশ দিলেন । ফলে বেসরকারী হিসাব অনুযায়ী ১৪০ জন কৃষকের মৃত্যু হয় এবং ১৫০ জন কৃষক আহত হয়েছিল ।
অন্যদিকে সরকারী হিসাব মতে ১৫ জনের মৃত্যু এবং ৩৭ জন আহত হয়েছিল । পথরুঘাটের কৃষক বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকার অতি কঠোর হাতে দমন করেছিল । কিন্তু ১৮৬১ সাল থেকে চলে আসা এইসব কৃষক বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে অসমীয়া জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ।

প্রশ্ন ৭। ১৮৯৪ সালে পথরুঘাটে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহের একটি খতিয়ান তুলে ধরো ।


Ans: উত্তরঃ পথরুঘাটের জনতা ১৮৯৪ সালের জানুয়ারীর মাঝামাঝি রাইজমেলের যোগে খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত থাকেনি , খাজনা সংগ্রহেও বাধা প্রদান করেছিল । বর্ধিত হারে ভূমির খাজনা নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলদৈ মহকুমার কলাইগাঁও , মঙ্গলদৈ , সিপাঝার এবং পথরুঘাট তহশিলের কৃষকগণ সভায় মিলিত হয়েছিল । কৃষকরা নিজ নিজ অঞ্চলে রাইজমেল অনুষ্ঠিত করার পর পথরুঘাটে জানুয়ারী মাসের ২৬ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত এক বৃহৎ গণসভা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এই খবর পেয়ে মহকুমাধিপতি জিলাধিপতি জে . ডি . অ্যাণ্ডারসনকে সেই সম্পর্কে অবগত করেছিল । অ্যাণ্ডারসন সেই সমাবেশ বন্ধ করতে সামরিক বাহিনীর ফৌজ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় । পুলিশ মিলিটারির সাহায্যে খাজনা না দেওয়া কৃষকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া কার্য কৃষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছিল । প্রায় ২০০ জন লোক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে যাওয়া বেরিংটন সাহেবকে ঘিরে ধরে । কোনক্রমে তিনি জনতার হাত থেকে নিস্তার পেয়ে বিশ্রাম শিবিরে উপনীত হন । সেখানে অপেক্ষারত জিলাধিপতি অ্যাণ্ডারসনকে ঘটনার সবিশেষ অবগত করান বা জানান । উপায়ুক্ত অ্যাণ্ডারসন পুলিশ অধিক্ষককে কৃষকদের শক্তি প্রয়োগ করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । পুলিশ অধিক্ষক কৃষকদের শক্তি প্রয়োগ করে তাড়াবার চেষ্টা করলে কৃষকরা উত্তেজিত হয়ে লাঠি উচিয়ে তেড়ে এলে হুটোপুটি আক্রমণের তোড়ে পুলিশ – মিলিটারি , প্রশাসনিক কর্মচারি কেউই চোখ খুলতে পারেননি । সেই অবস্থায় উপায়ুক্ত পুলিশ অধিক্ষককে গুলি চালনা করবার নির্দেশ দিলেন । ফলে বেসরকারী হিসাব অনুযায়ী ১৪০ জন কৃষকের মৃত্যু হয় এবং ১৫০ জন কৃষক আহত হয়েছিল । অন্যদিকে , সরকারী হিসাব মতে ১৫ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩৭ জন আহত হয়েছিল। পথরুঘাটের কৃষক বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার অতি কঠোর হাতে দমন করেছিল । এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার অপরাধে সরকারী ভাষ্য মতে , মোট ৩৭ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়েছিল । মঙ্গলদৈর মহকুমাধিপতি রেনসম সাহেব বিচার কার্য সমাধা করেছিলেন । এই বিদ্রোহে গ্রেপ্তার করা লোকদের মধ্যে আকুল শেখ এবং অন্যান্য ছয়জনকে শাস্তি প্রদান করা হয় । বাকি সকলকে মুকুব করে দিয়েছিল ।

page No - 6

প্রশ্ন ৮। ১৮৫০ সালে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জয়ন্তীয়াদের বিদ্রোহের বিষয়ে একটি টীকা প্রস্তুত করো ।


Ans: জয়ন্তীয়া রাজ্য ১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র সিংহের হস্তগত হয়ে ইংরেজের হাতে যায় । জয়ন্তীয়া পাহাড় কোম্পানীর রাজ্যের সঙ্গে সামিল করায় স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনচেতা জয়ন্তীয়া জনজাতির লোকেরা বিক্ষুব্ধ হয়েছিল । ভূমি দখলের চেয়েও ব্রিটিশ প্রশাসকের উৎপীড়নের দরুন চিন্টেং বা জয়ন্তীয়ারা অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিল । জনজাতিরা উন্মুক্তভাবে সকলে মিলেমিশে মাছ ধরে , খড়ি কাটে এবং খড় সংগ্রহ করে , তাই সেইসব অঞ্চলের ওপর ব্রিটিশ প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাজস্ব সংগ্রহের পথ প্রশস্ত করে । তদুপরি জয়ন্তীয়াদের ধর্মীয় এবং পরম্পরাগত অনুষ্ঠানপর্ব , তথা সামাজিক জীবনেও হস্তক্ষেপ করেছে ইংরেজরা , সুদূর অতীতকাল থেকে ব্যবহার করে আসা অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়ায় স্বাধীনচেতা পাহাড়িয়া জনজাতিটি ইংরেজ বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিল।
এই পরিস্থিতিতে তারা তাদের সর্দার এবং দলেদের সঙ্গে গ্রামের সভায় মিলিত হয়েছিল এবং ইংরাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি চালিয়েছিল । অন্যদিক কোনো দিন নগদ ধন হিসাবে রাজস্ব কর ইত্যাদি যারা দেয়নি , সেই রকম একটি পার্বত্য জাতি জয়ন্তীয়াদের উপর ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব জাহির করার অছিলায় গৃহ – কর , আয়কর ইত্যাদি আরোপ করেছিল । প্রথমত ব্রিটিশ গৃহ – কর প্রবর্তন করে । সেই সময় জোয়াইর তহশিলদারকে আড়ালে রেখে জয়ন্তীয়ারা বিদ্রোহের সূচনা করে । এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়ন্তীপুর , মূলাগোল , জাফলছেরা ইত্যাদি অঞ্চলে বিদ্রোহের সূচনা হয় । ব্রিটিশ প্রশাসন কঠোর নীতি গ্রহণ করায় ১৮৬১ সালে ওকিয়াং নংবাহ – এর নেতৃত্বে জয়ন্তীয়ারা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সজোরে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । জয়ন্তীয়ারা ১৮৬২ সালের ১৭ জানুয়ারী তারিখে জোয়াইতে যে ব্রিটিশ ছাউনি রয়েছে , সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করে । বিদ্রোহীরা জোয়াই – চেরাপুঞ্জি এবং চেরাপুঞ্জি – জয়ন্তীপুরের মাঝের দুটো পথেই ওৎ পেতে আগে থেকেই অবরোধ করে রেখেছিল । জয়ন্তীয়াদের উপর ব্রিটিশ সরকার নিয়োজিত ৪৪ নং দেশীয় পদাতিক সৈন্য এবং ৩৩ নং বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ বাহিনীর লোক অমানুষিক অত্যাচার আরম্ভ করেছিল । বিদ্রোহীরাও প্রতিপক্ষের অসংখ্য লোককে হত্যা করেছিল ।
ইংরেজ সরকার ইস্টার্ন কমাণ্ডার বিগ্রেডিয়ার জি . ডি . শ্বায়ারকে সমগ্র জয়ন্তীয়া পাহাড়ের উপর সামরিক ও অসামরিক কর্তৃত্ব প্রদান করেছে , সঙ্গে বি . ডব্লিউ মর্টনকে খাসি – জয়ন্তীয়া পাহাড়ের ডেপুটি কমিশনার নিয়োগ করেছিলেন । অন্যত্র লাগাতার সরকারী আক্রমণের ফলে জয়ন্তীয়া বিদ্রোহীদের শক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে যাচ্ছিল । ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহীরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং তাদের নেতা ওকিয়াং নংবাহককে কোনো লোক জীবন্ত ধরে এনে ব্রিটিশের হাতে অর্পণ করলে তাকে ১০০০ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল । অবশেষে ওকিয়াং নংবাহ ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়ে এবং বহু লোকের উপস্থিতিতে ব্রিটিশ জোয়াইতে তাকে ফাঁসিকাঠে ঝোলায় ।
এই ঘটনা জয়ন্তীয়া বিদ্রোহীদের সকল উৎসাহ একেবারে হ্রাস করে দিয়েছিল এবং অনেকেই স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিল । এভাবেই ১৮৬৩ সালের মধ্যেই জয়ন্তীয়া বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

প্রশ্ন ৯। ১৮৯১ সালে মণিপুরে টিকেন্দ্রজিতের নেতৃত্বে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিষয়ে লেখো।


Ans: উত্তরঃ বহু বছর পূর্ব থেকেই মণিপুর রাজ্য ব্রিটিশের দ্বারা আশ্রিত এবং স্বীকৃত দেশীয় রাজ্যরূপে বজায় ছিল । মণিপুরে সিংহাসন লাভের জন্য ১৮৯০ সালে রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে গৃহকোন্দলের সূচনা হয়েছিল । এই উত্তরাধিকারীর যুদ্ধে অসমের চিফ কমিশনার অনাহক হস্তক্ষেপ করেছিল ।
ইংরাজের উপস্থিতির সুবিধা গ্রহণ করে যুবরাজ কুলচন্দ্র মহারাজ সুরচন্দ্রকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজেই রাজা হন ( ২১ সেপ্টেম্বর , ১৮৯০ সালে ) । সুরচন্দ্র ইংরাজের সাহায্য ভিক্ষা করেছিল , যদিও তারা কুলচন্দ্রকেই মণিপুরের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল । কিন্তু তলে তলে চলছিল ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ । এই বিদ্রোহের মূল নেতা সেনাপতি টিকেন্দ্রজিতকে দেশান্তরিত করার জন্য ব্রিটিশ নতুন রাজা কুলচন্দ্রকে ব্যতিব্যস্ত করত । কিন্তু দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করা জনপ্রিয় নেতাকে কেবল ব্রিটিশের কথা মতো দেশান্তরিত করাটা কুলচন্দ্রের পক্ষে সহজ কথা ছিল না ।
তাই অসমের চিফ কমিশনার জে . ডব্লিউ . কুইন্টন এবং চারজন ইউরোপীয় কর্মচারী তাঁকে পাকড়াও করার জন্য নিজেই এসে মণিপুরে উপস্থিত হলে , স্বাধীনতাকামী মণিপুরীরা তাদের সকলকে হত্যা করে । এই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী মণিপুরে প্রেরণ করা হয় । ইংরাজ বাহিনী বীর সেনাপতি টিকেন্দ্রজিতকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয় । ব্রিটিশ কর্মচারিকে হত্যা করা , ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করার অপরাধে টিকেন্দ্রজিতকে ফাঁসি দেওয়া হয় । রাজা কুলচন্দ্রকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয় । একজন মণিপুরী নাবালক রাজকুমার চূড়চন্দ্রকে রাজা ঘোষণা করা হয় ( সেপ্টেম্বর , ১৮৯১ সালে ) । রাজা নাবালক হওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিকে মণিপুরের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ।
মণিপুর আড়াই লাখ টাকা বিদ্রোহের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ব্রিটিশ সরকারকে দিয়েছে । এছাড়াও বছরে ৫০,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছিল । এইভাবে মণিপুর রাজ্যে ইংরাজের আধিপত্য স্থাপিত হয়েছিল ।

সংক্ষেপে টীকা লেখো

১। অসমে ইংরাজ প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থা ।


Ans: অসমে ব্রিটিশ শাসনের পূর্ববর্তী অবস্থায় মুদ্রা হিসাবে রাজস্ব সংগ্রহের ব্যবস্থা ছিল না । কিন্তু ইংরাজের প্রবর্তিত টাকার মাধ্যমে মাটির খাজনা এবং অন্যান্য কর সংগ্রহ ব্যবস্থা অসমীয়া প্রজার অবস্থা শোচনীয় করে তুলছিল । ব্রিটিশ সরকারের নতুন ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির নীতি এবং মুদ্রা অর্থনীতি অসমীয়া আমজনতার মনে তীব্র অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছিল । এই মুদ্রা অর্থনীতি অসমে সুদখোর মহাজন শ্রেণির সৃষ্টি করেছিল এবং অসমীয়া প্রজা এই সুদখোর মহাজন শ্রেণির কাছ থেকে টাকা ধার করে হলেও ভূমিরাজস্ব সরকারকে দিতে বাধ্য হয়েছিল । এই মহাজন শ্রেণি ছিল বহিরাগত ব্যবসায়ী ; মারোয়ারি ( কেঞা ) এবং বাঙ্গালি মহাজন । তদুপরি ইংরাজরা ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে উজান অসমে চা বাগান স্থাপন করেছিল । চা চাষিদের উৎসাহিত করবার জন্য বাগানের অন্তর্গত ভূমির রাজস্ব রেহাই দিয়েছিল। ফলে ভূমি রাজস্বের বোজা দরিদ্র সাধারণ কৃষককে বহন করতে হয়েছিল ।



২। মণিরাম দেওয়ান ।

Ans :- মণিরাম দেওয়ান ছিলেন ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর একজন দক্ষ ও বিশ্বস্ত কর্মচারী । ক্যাপ্টেন নিউফডিল এই দক্ষ ও প্রতিভাশালী অসমীয়া অভিজাতকে যোরহাটে ১৮২৮ সালে সেরেস্তাদার নিযুক্ত করেছিলেন । এই কার্যে তিনি বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেন । অহোম অভিজাতদের মধ্যে যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বিস্তার লাভ করেছিল তখন মণিরাম তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । ১৮৩৯ সালে পুরন্দর সিংহ সিংহাসনচ্যুত হলে মণিরাম ইংরেজদের উপর খুব অসন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে কোনো কাজ করতে অরাজি হন । তিনি পুরন্দর সিংহের পৌত্র কন্দর্পেশ্বর সিংহের রাজ্য প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা করে বিফল হন । মণিরাম তখন ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের পথ বেছে নিলেন । ১৮৫৭ সালে উত্তর ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের বিস্তার লক্ষ্য করে মণিরাম উৎসাহিত হন । তিনি তাঁর বাঙালী বন্ধু মধু মল্লিকের সাহায্যে কন্দর্পেশ্বর সিংহের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেন এবং তাঁকে স্থানীয় সিপাহীদের সাহায্যে বিদ্রোহের জন্য তৈরি হতে উৎসাহিত করেন । কন্দর্পেশ্বর সিংহ যোরহাট ও গোলাঘাটের সিপাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন । কিন্তু কন্দপেশ্বর সিংহ ও মণিরামের বিদ্রোহের প্রচেষ্টা বেশি দূর অগ্রসর হবার আগে ধরা পড়ে । ধৃত হওয়ার পর কন্দপেশ্বর সিংহকে বর্ধমানে অন্তরীণ করা হয় এবং মণিরাম দেওয়ানকে ১৮৫৮ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি যোরহাটে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয় ।

-->